মু: মাহবুবুর রহমান
বয়স মাত্র ১৫ বছর। অথচ এরই মধ্যে খেতাব পেয়েছে বিশ্বের একজন উদীয়মান বিজ্ঞানী হিসেবে। আবার সবাইকে চমকে দিয়ে সেই কিশোরীই এবার টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে প্রথমবার ‘কিড অফ দ্য ইয়ার’ সম্মানে ভূষিত হয়েছে। বলছি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কিশোরী বিজ্ঞানী গীতাঞ্জলি রাও (Gitanjali Rao) এর কথা।
প্রতিবছর মার্কিন টাইম ম্যাগাজিন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করলেও এবারই প্রথম বর্ষসেরা শিশুদের নিয়ে তালিকা প্রকাশ করে। ৫০০০ এর বেশি আমেরিকান শিশুর মধ্য থেকে বিজ্ঞান, শিল্পসহ নানাক্ষেত্রে অবদানের ভিত্তিতে ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী পাঁচজন শিশুকে বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এ তালিকা। আর এতে সবাইকে পেছনে ফেলে ‘সেরা শিশু ২০২০’ বা ‘কিড অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয়-মার্কিনি গীতাঞ্জলি রাও।
২০২০ এ সর্বপ্রথম বর্ষসেরা ব্যক্তির পাশাপাশি বর্ষসেরা শিশুর স্বীকৃতিও চালু করল টাইম ম্যাগাজিন ৷ এর আগে বর্ষসেরা ব্যক্তির তালিকায় একমাত্র অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলো সুইডেনের ১৬ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ৷ আর এবার প্রথম চালু হওয়া বর্ষসেরা শিশুর স্বীকৃতি পেয়ে সবাইকে চমকে দিলো ১৫ বছর বয়সী গীতাঞ্জলি ।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গীতাঞ্জলি রাও দূষিত পানির সমস্যা, মাদকাসক্তি এবং সাইবার বুলিংয়ের মতো সমস্যা মোকাবিলার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তরুণদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত অর্থাৎ সংক্ষেপে ‘স্টেম’(STEM-Science, Technology, Engineering and Mathematics) বিষয়ে আগ্রহী করতে চায় সে। বিশ্বব্যাপী নানা সমস্যা সমাধানে তরুণ উদ্ভাবকদের একটি ‘গ্লোবাল কমিউনিটি’ গড়ে তোলাও তার লক্ষ্য বলে জানায় টাইম। আর এসব মিলিয়েই তাকে ২০২০ সালের ‘বর্ষসেরা শিশু’ নির্বাচন করা হয়েছে।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও নিজের কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে গীতাঞ্জলি। ২০১৭ সালে দ্রুত ও স্বল খরচে সিসাদূষিত পানি শনাক্তের যন্ত্র আবিষ্কার করে ”আমেরিকাস টপ ইয়ং সাইনটিস্ট” (আমেরিকার শীর্ষ তরুণ বিজ্ঞানী)র খেতাব পেয়েছিলো সে। আর গত বছর ফোর্বসের ‘৩০ আন্ডার ৩০’ অর্থাৎ অনূর্ধ্ব ৩০ সফল ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছিলো গীতাঞ্জলি রাও।
টাইম ম্যাগাজিন গীতাঞ্জলি রাওকে এবছর তাদের কভারে স্থান দিয়েছে। টাইমের তরফে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবী তাদের নিয়েই যারা তাকে তৈরি করে। আগামী প্রজন্মের শিশুরা, নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে যারা এই পৃথিবীকে বদলাতে চায়, সেই ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী ৫ হাজার শিশুদের পিছনে ফেলে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে গীতাঞ্জলি।’
গীতাঞ্জলী রাও যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর বাসিন্দা। মা ভারতী এবং বাবা রাম রাওয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর লোন ট্রিতে থাকে গীতাঞ্জলী। করোনাকালের দিনগুলো বাড়িতেই কেটেছে তাঁর। ভার্চ্যুয়াল ক্লাসের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন সেমিনারে। ফেন্সিং, নাচ, গান, এমনকি লকডাউনের দিনগুলোতে বাসার কাজ করেছেন গীতাঞ্জলী।
টাইম–এর বর্ষসেরা শিশু নির্বাচিত হওয়ার পর টাইম স্পেশ্যালের জন্য গীতাঞ্জলির সাক্ষাৎকার নেন হলিউড অভিনেত্রী তথা সমাজকর্মী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কলোরাডোর বাড়ি থেকে ‘জুম কল’-এ গীতাঞ্জলির সঙ্গে কথা বলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গীতাঞ্জলি জানিয়েছে, ‘পর্যবেক্ষণ করো, মাথা খাটাও, গবেষণা করো, ভেবে ঠিক করো ও বিষয়টি অন্যকে জানাও।’
গীতাঞ্জলি রাও জানায়, ‘আমাদের প্রজন্ম এমন সব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। আর পুরনো সমস্যাগুলো তো আছেই। যেমন, ভয়াবহ মহামারী পরিস্থিতির মাঝেও আমাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন সব সমস্যা আসছে, যেগুলি আমরা তৈরি করিনি অথচ এখন তার সমাধান খুজতে হচ্ছে, যেমন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও সাইবার বুলিং।’
সাক্ষাৎকারে গীতাঞ্জলি বলে, ‘আমি আর পাঁচটা বিজ্ঞানীর মতো দেখতে নই৷ যে বিজ্ঞানীদের আমরা টেলিভিশনে দেখি, তারা সবাই বয়স্ক, পুরুষ ও শ্বেতাঙ্গ৷ আমার অবাক লাগে এটা ভেবে যে, কিছু নির্দিষ্ট জেন্ডার, বর্ণ ও বয়সের মানুষকেই আমরা কিছু বাঁধাধরা কাজ করতে দেখতে অভ্যস্ত৷ আমার মতো কাউকে দেখতে পেতাম না, সেটি আরও কঠিন ছিল৷ তাই আমি সবাইকে বলতে চাই যে, আমি যদি এটা করতে পারি, তা হলে যে কেউ তা পারবে৷’
এবার টাইম ম্যাগাজিনের বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচ শিশুর তালিকায় গীতাঞ্জলি ছাড়াও আরও যে চার শিশু স্থান পেয়েছে তারা হচ্ছেন: ক্যালিফোর্নিয়ার চিত্রশিল্পী টাইলর গর্ডন (Tyler Gordon) (১৪), মিজৌরির ডিজাইনার জর্ডান রিভস (Jordan Reeves ) (১৪), ভার্জিনিয়ার ক্রেওন শিল্পী ব্যালেন উডওয়ার্ড (Bellen Woodard) (১০) এবং অস্টিনের হাঙ্গার কর্মী আয়ান ম্যাককেনা (Ian McKenna) (১৬)।