এই মাত্র কোভিড ১৯ জীবনধারা প্রিয় লেখক বাংলাদেশ ব্রেকিং মু: মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্য

যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন- বাংলাদেশের জন্য ‍সুসংবাদ!

মু: মাহবুবুর রহমান

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এটাকে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে অতি দ্রুতই করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের নীতিগত অনুমোদনকে বাংলাদেশের জন্য সুখবর উল্লেখ করে গতকাল (৩০ ডিসেম্বর ২০২০) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আগামী বছর (২০২১) জানুয়ারির মাঝামাঝিই ভ্যাকসিন পেতে পারে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন আনতে গত ৫ নভেম্বর চুক্তি করেছিল সরকার। যুক্তরাজ্য সরকার সেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দিয়েছে । এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য সুখবর। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন হওয়া মাত্রই ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবে।’

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২০) মহাখালী বিসিপিএস অডিটরিয়াম হলে ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ডাটা মিডিয়া ব্লুমবার্গ কর্তৃক বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপি ২০-তম ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্থানের স্বীকৃতি উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ আগামী (২০২১) জুন মাসের মধ্যেই গ্যাভি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক আরও ৫-৬ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন দেশে চলে আসবে। ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশ না নেয়ায় ১৮ বছরের নিচে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষকে ও গর্ভবতী প্রায় ৩৫ লাখ মায়েদেরকে ভ্যাকসিন দেয়া না লাগলে পাঁচ থেকে ছয় কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োগেই দেশ অনেকটা নিরাপদ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার রেগুলেটরি এজেন্সি-এমএইচআরএ বুধবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২০) দেশটিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনা টিকাটি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এর অর্থ হলো টিকাটি নিরাপদ এবং কার্যকর। বাংলাদেশের কর্মকর্তারাও বলছেন, ব্রিটেনের অনুমোদনের পর বাংলাদেশে এই টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই।

এদিকে ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকারের টিকা প্রকল্পের ভারতীয় অংশীদার সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ভারতে নাম দেয়া হয়েছে কোভিশিল্ড) টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে ইতিমধ্যে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছে সিরাম ইনস্টিটিউট। যুক্তরাজ্য অনুমোদন দেয়ায় দ্রুতই ভারতও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ভারতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেলে তা বাংলাদেশের মানুষও পাবে। ইতিমধ্যে দুটি দেশের বাজারে একই সময়ে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত করোনার টিকা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে গত ১৩ ই ডিসেম্বর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্রয়চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে বলা আছে, সিরাম ইনস্টিটিউট, ভারত ও বাংলাদেশের বাজারে একই সময়ে টিকা দেবে। অর্থাৎ সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকা ভারতে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেলে তখন তা বাংলাদেশেও আসবে। চুক্তি অনুসারে সিরাম ইনস্টিটিউটের কারখানায় তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা পাবে বাংলাদেশ। এই টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। কারণ এই টিকা দুই ডোজ করে নিতে হয়।

বাংলাদেশে কি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এখনই দেয়া সম্ভব ?

অক্সফোর্ডের করোনা টিকা দ্রুত পাওয়া গেলেও প্রশ্ন হলো, এখনই কি বাংলাদেশের মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করা যাবে? কারণ এদেশের মানুষের দেহে অক্সফোর্ডের করোনা টিকার ট্রায়াল চালানো হয়নি।

এ বিষয়ে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকেও ভ্যাকসিনটি দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে দেশে আলাদাভাবে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হবে না বলেই মনে করি।“

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও বলছেন, যুক্তরাজ্যে কোন টিকার অনুমোদন দেয়া হলে বাংলাদেশে তার আলাদা কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের পরামর্শক কমিটির প্রধান মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছন, বাংলাদেশে কোন টিকা দিতে গেলে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

তিনি জানান যে এই অনুমোদনের বিষয়ে তিনটি ক্লজ রয়েছে।

প্রথমত: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন থাকলে বাংলাদেশে সেই টিকা ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে সংস্থাটি অক্সফোর্ডের টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে কীনা।

দ্বিতীয়ত: যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ (এফডিএ) যদি কোন টিকার অনুমোদন দিয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশে তার জন্য আলাদা করে কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। সে অনুযায়ী ফাইজার- বায়োএনটেকের টিকাও বাংলাদেশে দেয়া যাবে।

তৃতীয়ত: যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের সাতটি দেশের কোন একটিতে টিকা অনুমোদন পেলে সেই টিকাটিও বাংলাদেশে দেয়া যায়। অক্সফোর্ডের টিকাটি যেহেতু যুক্তরাজ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেই হিসেবে বাংলাদেশেও এই টিকাটি দেয়া সম্ভব।

এই টিকাটি যেহেতু বাংলাদেশে পরীক্ষা করা হয়নি সেকারণে কোন সমস্যা হতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানান, পরীক্ষা করা গেলে ভাল হতো। কিন্তু কোন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তো মানুষের মিল থাকে। দক্ষিণ এশিয়ার পপুলেশন মোটামুটি একই ধরনের। ফলে বাংলাদেশে পরীক্ষা না করে টিকা দিলে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারতে যদি কোন সমস্যা না হয় বাংলাদেশেও সমস্যা হবে না।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকাটি ‘গেম চেঞ্জারের’ ভূমিকা পালন করবে, কারণ এটি পরিবহন ও সংরক্ষণ করা অনেক সহজ। যেখানে ফাইজার- বায়োএনটেকের টিকাটি সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেখানে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যায়, যে সংরক্ষণ সুবিধা বাংলাদেশেরও আছে।

Related posts

২৫ বছরের নারী একসঙ্গে ৯ সন্তান জন্মদিলেন

Irani Biswash

ক্যান্সারের নামে অর্ধকোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ, উড়ালেন জুয়া খেলে

razzak

ব্রাজিলে বন্যা ও ভূমিধসে ১৮ জনের মৃত্যু

razzak

Leave a Comment

Translate »