ডাঃ ফারহানা মোবিন
আমার জীবনের ভীষণ প্রিয় একটি দিন আমার সমাবর্তন। এম.বি.বি.এস. পাস করার পর ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে দেয়া হয়েছিল চিকিৎসক হবার সনদপত্র । ভালো লাগার সে অনুভূতি লিখে বোঝানোর নয়।
আমার ভীষণ আনন্দের এই দিনে খুব খুব…
বেশী মিস করছিলাম আমার বাবাকে । যে মানুষটা আর কোন দিন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেনা,
” মা তোমাদের কে অনেক বড় হতে হবে । “
হাজার হাজার graduate রা ছবি তুলছিল । আর আমি বার বার যেন দেখতে পেলাম আমার বাবাকে ।
বিশ হাজার চিকিৎসকদের ভীড়ে আমি বার বার কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম। দৈনিক প্রথম আলো থেকে ফিরোজ এহতেশাম ভাই (সম্পাদক, সপ্ন নিয়ে, দৈনিক প্রথম আলো) আমাকে আর শিখতি সানি নামের এক সাংবাদিক ভাইকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, অনুষ্ঠানের নিউজটা কভার করার জন্য।
নিজের জীবনের ভীষণ আনন্দের একটি দিনের নিউজে অংশ নিয়েছিলাম আমি।
আমার আর শিখতি সানি ভাই এর করা নিউজ। নিউজ এর তথ্য সংগ্রহের সময় আমার এক জোড়া চোখ চারিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল আমার বাবাকে। যে মানুষটা আর কোন দিন ফিরে আসবেনা, আমার দুই চোখ বার বার শুধু সেই মানুষ টাকেই খুঁজছিল…!
আমি খুব বেশী স্মৃতিকাতর !!!
আমার মনে হচ্ছিল, আমার বাবা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলছে, ” মা তুমি ডাক্তার হয়ে গেছো? আমি খুব খুশী হয়েছি। “
অনবরত চোখের পানি তে কালচে হয়ে গেল আমার পুরো মুখ । চোখের পানিতে চোখের কাজল ভিজে উঠলো। ঝাপসা চোখে মনে মনে শপথ নিলাম , আমাকে আরও অনেক পথ চলতে হবে । আরও অনেক যুদ্ধ করতে হবে ।
ফিরোজ ভাই এর সম্পাদনায় আমাদের নিউজটা দৈনিক প্রথম আলোর “সপ্ন নিয়ে” পেইজের লিড নিউজ হিসেবে ছাপা হলো। লেখাটাতে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে শপথ নিলাম, অনেক বড়ো মাপের চিকিৎসক হতে হবে, আমাকে অনেক অনেক লিখতে হবে, অনেক পথ চলতে হবে।
আমার প্রিয় কবি রবার্ট ফ্রস্ট এর কবিতার পঙক্তি টা আমি বার বার উচ্চারণ করতে চাই,
” And miles to go before i sleep.
And miles to go before i sleep.
# ডাঃ ফারহানা মোবিন ; বারডেম হসপিটাল