মু: মাহবুবুর রহমান
মিশরের সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকা পড়া কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘এমভি এভার গিভেন’ অবশেষে মুক্ত হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২৯ মার্চ) ভোরে জাহাজটিকে পানিতে ভাসাতে সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে জাহাজটি সরানোর কাজে থাকা ইঞ্চকেপ শিপিং সার্ভিসেস। এর ফলে এক সপ্তাহ পর গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যিক নৌপথে পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে বলে জানায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
জাহাজটি সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকে থাকায় লোহিত সাগরের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরকে যুক্ত করা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই বাণিজ্য পথ বন্ধ হয়ে ছিলো প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকালে সুয়েজ খাল অতিক্রমের সময় প্রবল বাতাস ও ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে ‘এভার গিভেন’। প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং সুয়েজ খালে আড়াআড়িভাবে আটকা পড়ে।
পানামায় নিবন্ধনকৃত এভার গিভেন জাহাজটি আটকে থাকায় সুয়েজ খালে তৈরি হয় যানজট! তিনশর বেশি জাহাজের জট তৈরি হয় দুই প্রান্তে, তৈরি হয় বিপুল আর্থিক ক্ষতির উদ্বেগ। কারণ ইউরোপ থেকে ভারত মহাসাগরে আসতে তখন পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে আসা ছাড়া বিকল্প ছিল না। তাইওয়ান থেকে একটি জাহাজ সুয়েজ খাল হয়ে নেদারল্যান্ডসে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৫ দিনের মত, সেখানে ঘুরপথে আফ্রিকার কেইপ অব গুড হোপ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সেই জাহাজের সময় লাগবে ৩৪ দিন।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথে হয়ে থাকে। আর সুয়েজ খাল দিয়েই ১২ শতাংশ বাণিজ্য হয়। সারা বিশ্বের জলপথে বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ শিপিং কনটেইনার এই খাল দিয়েই যাতায়াত করে। তাই সুয়েজ খাল দিয়ে নৌচলাচল ফের শুরু করতে জাহাজটি আটক পড়ার পর থেকেই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান, যা টানা চলতে থাকে। উদ্ধারকাজে যুক্ত হয় এক ডজনের বেশি টাগবোট ও ড্রেজার। প্রায় এক সপ্তাহ পর অবশেষ আজ (২৯ মার্চ) আসে সুখবর।
উল্লেখ্য, সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং পৃথক করেছে আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশকে। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬৯ সময়ব্যাপী এটি কৃত্রিমভাবে নির্মিত হয়। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর সুয়েজ খাল আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। মিশরের সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ সুয়েজ খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। তবে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত এই খালের ওপর আধিপত্য বজায় রেখেছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন।