মু: মাহবুবুর রহমান
বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড হয়েছে। রোববার (২৮ মার্চ) সকাল আটটা থেকে সোমবার (২৯ মার্চ) সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই করোনায় সংক্রমিত সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এতদিন এটাই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড, যেটা ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো ২৯ মার্চ।
সোমবার (২৯ মার্চ) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার সকাল আটটা থেকে সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৫ হাজার ১৮১ জন আর এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৬ লাখ ৮৯৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৯৪৯ জন। আর মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৮ জন।
করোনা মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ ও প্রকাশ করে আসছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি, বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা এত দিন ছিল ৩২টি। তবে আজ (৩০মার্চ) থেকে বিশ্বের ৩৩ তম দেশ হিসেবে এই তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।
গতবছরের ১৮ জুন (করোনা সংক্রমণের ১০৩তম দিন) বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়ায়। মাত্র এক মাস পরে ১৮ জুলাই (সংক্রমণের ১৩৩তম দিন) করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছাড়ায় ২ লাখ। শনাক্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়ায় ২৬ আগস্ট। ৪ লাখ ছাড়ায় ২৬ অক্টোবর। ২০ ডিসেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ২৮৮তম দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়ায়। আর আজ (৩০মার্চ) সংক্রমণের ৩৮৭তম দিনে বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়ালো।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। আর বাংলাদেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চূড়ায় (পিক) উঠেছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসে।
গত বছরের জুন-জুলাই এর পর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি করোনা শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল বাংলাদেশে। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী। আর ২৯ মার্চ তো একদিনে সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হলো।
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা গত বছরের জুন-জুলাইয়ের মতো হওয়ার আভাস মিলছে। এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, রোগী শনাক্তের ভিত্তিতে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অজানা উৎসের ঝুঁকি থাকায় সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য বিধি মানতে হবে। আর যত দ্রুত সম্ভব নিতে হবে করোনার টিকা।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ ৬৯ হাজারের কিছু বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। আর আগামী ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা।