অভিমত জীবনধারা প্রবাস কথা ব্রেকিং শিক্ষা স্বাস্থ্য

রোজার তাৎপর্য

মানুষের জীবনে অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি ও পাপ মোচন করে অধিকতর পুণ্য লাভের অনেক পথ আল্লাহতায়ালা  তার বান্দাদের জন্য খোলা রেখেছেন। সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করার অনেক উত্তম পথ সমুহগুলোর মধ্যে একটি সহজ পথ হল রমজান মাসে রোজা রাখা।
রোজা ইসলাম ধর্মের পাচঁ টি মুল ভিত্তির তৃতীয়। রোজা শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে।আরবী সাওম বা সিয়াম অর্থ রোজা। এর শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা, সংযম পালন করা। হিজরী দ্বিতীয় বছরে শাবান মাসে রোজা সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা ফরজ ছিল। পবিত্র কোরআন শরিফে বলা হয়েছে “হে ঈমানদারগন তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যে ভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হও।”
(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
“রমজান মাসই হল সেই মাস যে মাসে নাযিল করা হয়েছে পবিত্র কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথ যাত্রীদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে  পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে রোজা রাখবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
“আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা হতে ভোরের সাদারেখা তোমাদের নিকট প্রতিভাত  না হয়।” ( সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)
রমজান মাসের চাঁদ দেখে রোজা আরম্ভ করতে হয় এবং পরবর্তি মাসের চাঁদ দেখে রোজা ভাঙতে হয়। রোজাকে চান্দ্র মাসের সাথে সম্পর্কিত করে দেওয়ার সুফল হল পৃথিবীর যে কোন জায়গায় যে কোন মানুষ খুব সহজেই রোজা রাখতে পারে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় বিভিন্ন নবী এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও রোজা পালন করতেন। যেমন ইহুদীরা প্রতি শনিবার এবং মোহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা পালন করতো। নবুওয়াত লাভের পুর্বে হযরত ঈসা (আঃ) ৪০ দিন রোজা রাখতেন। হযরত নূহ(আঃ) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ(সঃ) পর্যন্ত চন্দ্র মাস ১৩,১৪, ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা হত যাকে বলা হয়  ‘আইয়্যামে বিজ’।  তাছাড়া হিন্দুদের মধ্যেও এক শ্রেণীর হিন্দুরা একাদশী উপবাস করে থাকে। বলা যেতে পারে রোজা একটি ধর্মীয় প্রথা হিসেবে সকল স্থানে স্বীকৃত।
পানাহার এবং যাবতীয় ভোগ বিলাস থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামী বিধান অনুসারে প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয়।
রোজার ৩ টি ফরজ
১) নিয়ত করা (২) সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা (৩) যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।
রোজা রাখার ৪ টি শর্ত
১) মুসলিম হওয়া (২) বালেগ হওয়া (৩) অক্ষম না হওয়া (৪) ঋতুশ্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।
যে সব কারনে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ  করা যাবে কিন্তু পরে কাজা করতে হয়।
১) মুসাফির অবস্থায় (২) রোগ ব্যাধি বৃদ্ধির আশংকা থাকলে (৩) এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয় যাতে মৃত্যুর আশংকা থাকতে পারে (৪) শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে (৫) কোন রোজাদারকে সাপে দংশন করলে (৬) মহিলাদের মাসিক হায়েজ নেফাজ কালীন রোজা ভঙ্গ করা যায়।
সহি বোখারী শরীফের এক হাদিসে বলা হয়েছে বেহেশতের “রাইয়ান” নামক একটি দরজা আছে, কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদাররা বেহেশতে প্রবেশ করবে।
রোজা মানুষের ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। যারা একমাস ধরে দিনের বেলায় সব ধরনের খাদ্য দ্রব্য ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে দূরে থাকে তারা অন্যের ধন সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের লোভ লালসাকে দমন করতে পারে। রোজা মানুষকে উদার হতে শেখায়। রোজা সমাজে দুর্নীতি ও পাপ হ্রাস করে এবং খোদা ভীরুতা ও পরহেজগারিতা বৃদ্ধি করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে রোজা হল এক সার্বজনিন ইবাদত যা রোজাদারকে দান করে আত্মার সজীবতা, হৃদয়ে পবিত্রতা ও চিন্তাধারার বিশুদ্ধতা।

 

প্রতিবেদন: নীলুফা আলমগীর

কবি, লেখক ও কলামিস্ট, ক্যালগেরী, কানাডা

 

Related posts

কারখানার শ্রমিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ২ সিটের গাড়ি তৈরি করলেন

Irani Biswash

ক্যানসারে আক্রান্ত পুতিন, দাবি মার্কিন গণমাধ্যমের

razzak

এখনো টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়নি: ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর

Irani Biswash

Leave a Comment

Translate »