মু: মাহবুবুর রহমান
মহাকাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা একটি চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ আজ (৯ মে) পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। এরপর রকেটের বিশাল এ খন্ডটি হয় আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কোনো এক জায়গায়, নয়তো তার আগেই সেটি পুড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যদিও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
যদি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে তবে কোথায় ভেঙে পড়বে চীনা লং মার্চ ৫ বি রকেটের ধ্বংসাবশেষ? রকেটটি ভেঙে পড়লে ক্ষয়ক্ষতিই বা কী হতে পারে, এ নিয়ে আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এ যেন করোনা কাঁপুনির মধ্যে নয়া আতঙ্ক। উল্লেখ্য, গত বছরও এই লং মার্চ ৫ বি রকেট ভেঙে পড়েছিল। গত বছর সেটি আটলান্টিক মাহাসাগরে পতিত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানায়, প্রায় ২১ টন ওজনের চীনা লং মার্চ ৫ বি রকেটের টুকরোটি হতে চলেছে গত কয়েক দশকের মধ্যে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করা সবচেয়ে ভারী মহাকাশ বর্জ্য। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রকেটের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ অংশই বায়ুমন্ডলে প্রবেশের পর পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং যেটুকু পৃথিবীতে পড়বে, তাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা একেবারেই কম।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাঁরা চীনা লং মার্চ ৫ বি রকেটের ধ্বংসাবশেষের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে সেটিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, রকেটটি ভেঙে পড়লে তাতে মানব জীবনে খুব একটা ক্ষতি হবে না। সম্ভবত কোনও মহাসাগরে ভেঙে পড়তে পারে এটি।
শুক্রবার (০৭ মে) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন থেকে এক টুইটে বলা হয়, তাদের সেন্টার ফর অরবিটাল রিএন্ট্রি এবং ডেব্রিস স্টাডিজ (সিওআরডিএস)-এর সবশেষ অনুমান অনুসারে রবিবার (০৯ মে) গ্রিনিচ মান সময় ০৪:১৯ মিনিট (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৯ মিনিট) এর আট ঘণ্টা আগে বা আট ঘণ্টা পরে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটটির ধ্বংসাবশেষ।
যুক্তরাষ্ট্রের সিওআরডিএস-র অনুমানে রকেটটির পুনঃপ্রবেশের সম্ভাব্য অঞ্চল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের আশেপাশের কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে এটাও বলা হয়েছে, পৃথিবীতে প্রবেশ পথের যেকোনো জায়গায়ই রকেটের ধ্বংসাবশেষ আছড়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিক্স সেন্টারের বিশেষজ্ঞ জনাথন ম্যাকডোয়েল সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের পর রকেটের ধ্বংসাবশেষের পুরোটা পুড়ে না গিয়ে কিছু অংশ ভূমিতে আঘাত করতে পারে। এমনকি সেটি আবাসিক এলাকায়ও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা রকেটটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে পতিত হওয়ার সময়েই টুকরো টুকরো হওয়া শুরু করবে এবং অধিকাংশই আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। পুড়ে যাওয়ার পর বাকি অংশগুলোই পৃথিবীর ভূমিতে পড়বে। পৃথিবীর ৭০ ভাগই সাগর হওয়ায় সাগরে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মত তাদের। যদিও কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
গত ২৯ এপ্রিল চীনের হুনান থেকে ‘লং মার্চ ৫বি রকেট’টি উৎপেক্ষণ করা হয়। চীনা মহাকাশ প্রকল্প ‘তিয়ানহে স্পেস স্টেশন’ এর জন্য পাঠানো রকেটটি সফলভাবে মহাকাশ স্টেশনের অংশটিকে কক্ষপথে স্থাপন করতে পারলেও নিজেকে আর গ্রাউন্ড স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। রকেটটি মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা হওয়ার পর কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, লং মার্চ ৫বি এর ধ্বংসাবশেষের ওজন প্রায় ২১ টন। এটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ধসে পড়তে যাওয়া সবচেয়ে বেশি ওজনের ধ্বংসাবশেষ হতে যাচ্ছে। ধ্বংসাবশেষটি প্রায় ১০০ ফুট (৩০মিটার) লম্বা এবং ১৬ ফুট চওড়া। সেটি বর্তমানে কক্ষপথ হয়ে পৃথিবীর দিকে ঘণ্টায় প্রায় ২৭ হাজার ৬০০ কিলোমিটার গতিতে ধেয়ে আসছে।
ᐧ