অপরাধ কোভিড ১৯ জনদুর্ভোগ জাতীয় জীবনধারা দুর্ঘটনা ধর্ম ও জীবন বাংলাদেশ ব্রেকিং সেবামূলক কাজ স্বাস্থ্য

ইউপির মিথ্যা তথ্যে শাস্তি পেল অসহায় ফরিদ উদ্দিন

নিজস্ব সংবাদদাতা:  লকডাউনের কারণে সংসার আর নিজের চিকিৎসা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন ফরিদ উদ্দিন। এমন পরিস্থিতি ৩৩৩ নম্বরে প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য খাদ্য সহায়তা পাওয়ার আশায় ফোন করাটাই যেন কাল হলো তার। স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে তদন্তে আসা লোকদের বলেছেন ফরিদ উদ্দিন একজন ব্যবসায়ী এবং চারতলা বাড়ির মালিক।

বাবার রেখে যাওয়া ভবনের তৃতীয় তলার এক পাশের ছাদে টিনসেডের দুটি ছোট্ট কামরায় একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন ফরিদ উদ্দিন (৫৭)। একটি হোসিয়ারি দোকানে চাকরি করে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে কোনো মতে চলে তার সংসার। মাস তিনেক আগে ব্রেইন স্ট্রোক করে বাম চোখের দৃষ্টি হারানোর পাশাপাশি কথাবার্তাও খুব একটা গুছিয়ে বলতে পারেন না তিনি।

ইউপির মিথ্যা তথ্যে ওপর ভিত্তি করে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাজির হয়ে ১০০ দরিদ্রকে ত্রাণ দিতে বলেছিলেন ফরিদ উদ্দিনকে। এই ত্রাণের টাকা যোগাড় করতে নিজের আর ভাইয়ের স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বন্ধক দিতে হয়েছে তাকে। কষ্টে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার ( ২০ মে) ইউএনওর নির্দেশ মতে ১০০ দরিদ্রকে খাদ্য সহায়তা দিতে ফরিদ উদ্দিন রাজি হওয়ায় শনিবার বিকেলে সেই ত্রাণ দিতে এসেছিলেন ইউএনও আরিফা জহুরাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরাও। কিন্তু অসুস্থ ফরিদ উদ্দিন, তার স্ত্রী আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছেলেকে দেখে তারাও ‘হকচকিয়ে’ যান। আশ্বাস দিয়ে যান- বিষয়টি তারা খুব ভালোভাবেই দেখবেন এবং ফরিদ উদ্দিনের ব্যাপারে ভ্রান্ত তথ্য দেওয়া স্থানীয় ইউপি সদস্যের ব্যাপারেও প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, ইউএনও আমাকে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে আমি সত্যটাই বলেছি যে বাড়ির মালিক আমি। তিনি আমাকে বলেছেন- আপনি বৃদ্ধ মানুষ তাই জেল-জরিমানা করলাম না। কিন্তু যেহেতু আপনি সচ্ছল হয়ে খাবার চেয়েছেন তাই ১০০ দরিদ্রকে ত্রাণ দিতে হবে। আমি ভয়ে রাজি হই। কিন্তু সে সময় আমার অবস্থাটা বলতে গেলেও আমাকে স্থানীয় মেম্বার আইয়ুব আলী বলার সুযোগই দেননি। উল্টো ৩৩৩ নম্বরে ফোন না করে উনাকে কেন জানালাম না সেজন্য ধমকাতে থাকেন।

এই ত্রাণ যোগাড় করতে গিয়ে আমাদের স্বর্ণালংকার বন্ধক রাখতে হয়েছে, ধার করতে হয়েছে। মেম্বার আইয়ুব আলীও আমাদের সুদে ১০ হাজার টাকা ধার দিয়েছেন। গত দুইদিন আমরা ইউএনও আপার কাছে যেতে চাইলেও মেম্বার আমাদের ভয় দেখিয়েছেন যে ত্রাণ দেওয়ার আদেশ না মানলে তিন মাসের জেল হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে তিনি বলেন, সে কেন ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেবে? আর খাবারের দরকার হলে আমাকে বলতো, আমি স্থানীয় মেম্বার। এটাতো আমার জন্য ‘ডিসক্রেডিট’।

বিষয়টি নিয়ে ইউএনও আরিফা জহুরার কার্যালয়ে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ফরিদ উদ্দিনের বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীই প্রথম তথ্য দিয়েছিলেন যে তিনি চারতলা বাড়ির মালিক। পরবর্তীতে আমি যাচাই করতে নিজেই বৃহস্পতিবার সেখানে যাই।  এজন্য তাকে দুইদিন সময়ও দিয়েছি। কিন্তু এর মধ্যে কেউই কিন্তু আমাকে পুরো সত্যটা জানাননি বা ফরিদ উদ্দিনের পরিবার থেকেও কেউ জানাননি। যদি ঘটনা প্রকৃতপক্ষে এমনটি হয়ে থাকে তবে আমাদের  যিনি ভ্রান্ত তথ্য যে দিয়েছেন তার ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেব এবং ফরিদ উদ্দিনকে আমরা সহায়তা করব।

Related posts

এই প্রথম একদিনে ২৫ লক্ষাধিক করোনায় আক্রান্ত

razzak

আফগানিস্তানে গত ১৬ বছরে সাড়ে ২৮ হাজার শিশুর প্রাণহানি

razzak

টোকিও অলেম্পিকের শুভ সূচনা

Irani Biswash

Leave a Comment

Translate »