নিজস্ব সংবাদদাতা: বৈশ্বিক মহামারি করোনভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ২ লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে এক অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আর কখনোই পাঠাননি প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রবাসীরা আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
অর্থ মন্ত্রণায় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে সবশেষ জুন মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ মার্কিন ডলার। বিদায়ী অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই রেমিট্যান্স এসেছে ২ বিলিয়ন বা ২শ কোটি ডলারের বেশি করে। আর অর্থবছর শেষে দেখা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। অন্যদিকে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসীদের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের পাশাপাশি রফতানি আয় থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
এদিকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সের কারণেই অর্থবছরজুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নতুন নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সবশেষ ২৯ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৬ বিলিয়ন ডলারের সীমা অতিক্রম করে। আর আজ সোমবার (৫ জুলাই) এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, মূলত তিনটি কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। প্রথমত, অনেক প্রবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়েছেন কিংবা অনেকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তারা তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, সরকার ২ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এই কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। তৃতীয়ত, করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ থেকে দেশে আসা লোকের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে এতদিন যারা হাতে হাতে টাকা পাঠাত, এখন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।