আন্তর্জাতিক কোভিড ১৯ জাতীয় জীবনধারা টেকনোলজি নারী বাংলাদেশ ব্রেকিং যুক্তরাষ্ট্র সেবামূলক কাজ স্বাস্থ্য

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীর করোনা প্রতিরোধক ‘ভলটিক’ আবিস্কার

আন্তর্জাতিক সংবাদ :    করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নতুন এক প্রকার জীবাণুনাশক উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী সাদিয়া খানম। নতুন এই জীবাণুনাশক কোথাও একবার ছিটানো (স্প্রে) হলে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত সেই স্থান বা বস্তু জীবাণুমুক্ত থাকবে বলে দাবি করেছেন তিনি।

নিজের উদ্ভাবিত জীবাণুনাশকের নাম তিনি রেখেছেন ‘ভলটিক’। বিবিসি বাংলাকে এ সম্পর্কে সাদিয়া বলেন, ‘এই জীবাণুনাশ প্রক্রিয়ার একটি অংশ হচ্ছে- কোনো জীবাণু যদি কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসে তখনই সেই জীবাণু ধ্বংস করে ফেলা। অর্থাৎ কোনো কিছুর পৃষ্ঠ বা সারফেসের ওপর যদি কোনো ভাইরাস থাকে, এর সাহায্যে তাকে সাথে সাথেই মেরে ফেলা যায়।’

‘একবার কোনো কিছুর ওপর এই জীবাণুনাশক স্প্রে করা হলে সেই বস্তুটির ওপর একধরনের বন্ড বা প্রাচীর তৈরি হয়। এই বন্ড খুবই শক্তিশালী। টানা দুই সপ্তাহের জন্য ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, করোনাভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস, এইচআইভিসহ যে কোনো জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই ভলটিক।’

সাদিয়া ব্রিটেনের স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল সায়েন্স ও চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনোমিক মেডিসিন বিষয়ে পড়াশেনা করেছেন।

স্মৃতিভ্রষ্ট বা আলঝেইমার রোগের ওষুধ আবিষ্কার বিষয়ক একটি পিএইচডি গবেষণা করছিলেন সাদিয়া খানম; কিন্তু ব্রিটেনে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর পিএইচডি গবেষণার কাজ স্থগিত রেখে ইংল্যান্ডের চেস্টারশায়ারে নিজ বাড়িতে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি।

ভাইরাসটি ধ্বংসে একটি কার্যকর রাসায়নিক জীবাণুনাশক তৈরির সিদ্ধান্ত নেন সাদিয়া খানম। এ লক্ষ্যে তিনি নানা প্রকার রাসায়নিক সমীকরণের সন্ধান ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে একটি কার্যকর সমীকরণ উদ্ভাবনে সক্ষম হন। সেই সমীকারণের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে জীবাণুনাশক ‘ভলটিক’।

প্রস্তুতের পর প্রথম তিনি এর কার্যকারিতা পরখ করেছিলেন চেস্টারশায়ারে তার বাবার রেস্তোঁরায়। তারপর আরও বিভিন্ন জায়গায় এটি পরীক্ষা করে এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত হন সাদিয়া।

সাদিয়া খানমের দাবি, মানুষের ত্বক থেকে শুরু করে কাঠ, লোহা, কাপড়, কংক্রিটসহ যে কোনো বস্তুর উপরিপৃষ্ঠ বা সারফেসকে জীবাণু থেকে দীর্ঘসময় ধরে সুরক্ষা দিতে ভলটিক খুবই কার্যকর।

‘যখনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি একটি ঘরে প্রবেশ করেন, তখন সেই ঘরের ভেতরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারাক্ষণ ঘরের সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। কিন্তু এই ভলটিক স্প্রে দিয়ে ঘরটিকে সারাক্ষণই জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব। যেমন- আমি যদি কোনো একটি ঘর ভলটিক দিয়ে পরিষ্কার করি তাহলে ওই ঘরটি ১৪ দিনের জন্য সুরক্ষিত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে যত ধরনের জীবাণুনাশক আছে আমি সেগুলোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করেছি। কারণ আমি এমন একটা জিনিস তৈরি করতে চেয়েছি, যাতে সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায় এবং বর্তমানে যেসব জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলোর সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে।’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানী আারও বলেন, যে কোনো ওষুধ বা রাসায়নিক মিশ্রনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাপক ভোগান্তির কারণ হয়।

বিবিসি বাংলার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনায় বিপর্যস্ত ব্রিটেনে মহামারি মোকবিলায় সাদিয়া খানমের এই উদ্ভাবনকে বড় ধরনের আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)সহ জীবাণুনাশক সংক্রান্ত বিভিন্ন দফতর ও কর্তৃপক্ষও ভলটিক স্প্রের ওপর ট্রায়াল সম্পন্ন করে এটিকে অনুমোদন দিয়েছে।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এটি ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। বলা হচ্ছে কোভিড নিরাপত্তার ব্যাপারে এই উদ্ভাবন অনেক বড় একটি পদক্ষেপ। অদূর ভবিষ্যতে হাসপাতাল, কেয়ার হোম, হোটেল রেস্তোরাঁ, বিমান ও পরিবহন খাতে এই স্প্রে ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল।

তবে সাদিয়া খানম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, জীবাণুনাশক নিয়ে তার কাজ এখনো শেষ হয়নি ।এটি উদ্ভাবন করতে গিয়ে তিনি এখনো শেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ভলটিক স্প্রের উদ্ভাবন আলঝেইমার রোগের ওষুধ আবিষ্কারের ব্যাপারে তাকে অনেক আশাবাদী করে তুলেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে।

Related posts

টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

razzak

বঙ্গবন্ধু একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ দেশ দিয়ে গেছেন: পোপ ফ্রান্সিস

Mims 24 : Powered by information

ডেন্টালে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

razzak

Leave a Comment

Translate »