নিজস্ব সংবাদদাতা: চট্টগ্রামে আসার পথে ২০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। জানা যায়, তারা কক্সবাজারে যাবার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচর ক্যাম্প থেকে পালিয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে মীরসরাই ও সন্দ্বীপে মোট ৮৪ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর থেকে পালানোর পর আটক করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুলাই) সকালে সাগরপথে এসে মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ‘মীরসরাই ইকোনমিক জোনে’ ওঠার পর আনসার সদস্যরা তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
আটক ২০ জনের মধ্যে ১১টি শিশু এবং চারজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী আছেন। তারা হলেন— মো. আব্দুর রহমান (২৭) ও তার স্ত্রী সেতেরা বেগম (২০), মো. সাব্বির (২৬) ও তার স্ত্রী সঞ্চিতা বেগম (২২), রাজিয়া বেগম (২৩), নুরুল করিমা (২০), ছালমা খাতুন (৫০), জামাল হোসেন (২৪), নুর কায়দা (২৫) এবং তাদের হেফাজতে থাকা শিশু আয়াজ, রুমানা, নুর ফাতেমা, জান্নাত আরা, কিছমত আরা বেগম, মরিয়ম, আবুল কাশেম, ওসমান গণি, আয়াত, জান্নাত আরা ও সেতারা।
জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘আটক রোহিঙ্গারা ভাসানচর থেকে নৌকায় করে এসে সাগরতীরে শিল্পাঞ্চলে ওঠেন। আনসার সদস্যরা তাদের দেখতে পান। সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। আমরা গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন— তাদের কক্সবাজারের টেকনাফে যাবার পরিকল্পনা ছিল। রাতের আঁধারে ভাসানচর থেকে তারা পালিয়ে নৌকায় ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
সর্বশেষ গত ১১ জুলাই মীরসরাই ইকোনমিক জোন থেকে আটক করা হয় ১৮ জনকে যারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে এসেছিল।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে মায়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা প্রবেশ শুরু করেন। সেসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। গত তিন দশকে আসা নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে নৌবাহিনী নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, খেলার মাঠ, হাসপাতালসহ প্রায় এক লাখ মানুষের নিরাপদে থাকার সব ব্যবস্থা আছে বলে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
এ অবস্থায় গত বছরের (২০২০) ৪ ডিসেম্বর থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে গিয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে ভাসানচর থেকে ফের কক্সবাজারে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।