বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে ভারতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শনিবার রাতে বড়দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
অগ্রাধীকার ভিত্তিতে দেশটিতে বুস্টার ডোজ পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির যোদ্ধা ও ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা। এছাড়াও নতুন খ্রিষ্টীয় বছরের শুরুতেই ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য টিকাদানেরও ঘোষণা দেন মোদি। ওই কর্মসূচি শুরু হবে ৩ জানুয়ারি।
মোদি বলেন, ‘করোনা এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি। নতুন রূপ অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খোঁজ মিলছে ভারতেও। এই পরিস্থিতিতে আমাদের করোনাবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি। দেশে ১৮ লাখ আইসোলেশন বেড ও লক্ষাধিক আইসিইউ বেড প্রস্তুত রয়েছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার টিকা সতর্কতামূলক ডোজ ১০ জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মীদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া একাধিক রোগে আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদেরও চিকিৎসকের পরামর্শে টিকার অতিরিক্ত ডোজ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের টিকাদান মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার কাজকে সুসংহত করবে এবং স্কুলে পাঠদান কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করবে।
১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়া জরুরি ছিল। এটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। স্কুল খুলে গেছে, তাই ওদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। সব দিক থেকে দেখলে ছোটদের টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছিল। ওমিক্রনে বাচ্চারাও আক্রান্ত হচ্ছে। এ বার তারাও টিকা পেলে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। টিকাকরণের ফলে সংক্রমণ কতটা কমবে এখনই তা বলা না গেলেও টিকায় মৃত্যুহার কমছে লক্ষ্যণীয় হারে।’
চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা খুব দরকার ছিল। বুস্টার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। বুস্টারের সঙ্গে দেশে এই মুহূর্তে যারা কোভিডের টিকাকরণের যোগ্য তাদেরও দ্রুত টিকাকরণ শেষ করার চেষ্টা এবং যারা প্রথমে টিকা নিয়েছেন, তাঁদের প্রিকশন ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ততে মনে হচ্ছে টিকাকরণের বিষয়ে আমরা সঠিক পথে চলছি। টিকাকরণের ফলে শরীরে কোভিডের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে, ৬ থেকে ৯ মাস পর ধীরে ধীরে সেই আন্টিবডি কমে যাচ্ছে বলে ল্যানসেটে একটি তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে, দেশে যারা প্রথম দিকে টিকা নিয়েছেন, তাদের বুস্টারের প্রয়োজনীয়তা আছে।’
ওমিক্রনে আতঙ্কিত না হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেছেন, ‘ভারতে অনেক মানুষের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সতর্ক থাকুন, সজাগ থাকুন। মাস্ক পরুন ও হাত ধোয়া অব্যাহত রাখুন।’
এদিকে, ভারতে ওমিক্রন পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সবশেষ একদিনে দেশটিতে ৪১৫ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। এমনকি মুম্বাই, দিল্লি, গুজরাটেও বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা।
এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি রাজ্যে রাত্রিকালীন কারফিউসহ নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মহারাষ্ট্রে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের পাশাপাশি, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশে স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
ওমিক্রন পরিস্থিতি পরিদর্শনে ইতোমধ্যে মহারাষ্ট্র, কেরালা, তামিলনাড়ুসহ ১০টি রাজ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন, করোনা পরীক্ষা, টিকা কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি বিধিনিষেধ আরোপের ওপর জোর দেন তিনি।