প্রতি বছর দেশে মসজিদ ও মন্দির সংস্কার বা মেরামতের জন্য এমপিদের মঞ্জুরি প্রদান করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থ মঞ্জুরি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের তিন দফা চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও এমপিদের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। মাত্র ২৪ জন এমপি বরাদ্দকৃত অর্থের জন্য আবেদন করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর অক্টোবরে এমপিদের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ-মন্দিরে অর্থ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরম পাঠানো হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকেও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ফরম বিতরণ করা হয়েছে। নির্ধারিত ফরম যথাযথভাবে পূরণ করে আধা সরকারি (ডিও) পত্রসহ আবেদন ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়। আশানুরূপ ডিও লেটার না পাওয়ায় পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে আবার দুই দফা চিঠি ইস্যু করা হয়।
গত ১৫ই ডিসেম্বর শেষ ইস্যু করা হয়েছিল। উল্লিখিত সময়ে ৩৫০ জন এমপি’র মধ্যে মাত্র ২৪জন ডিও লেটার দিয়েছেন। চলতি অর্থবছরে জিটুপি পদ্ধতিতে সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত আবেদন না পাওয়ায় এই ফান্ড ট্রান্সফার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে এমপিদের ডিও লেটারসহ আবেদন জমাদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, সাধারণত অর্থবছরের শেষের দিকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুদান বিতরণ করে থাকে মন্ত্রণালয়। অনুদান বিতরণকালীন সময়ে এমপিদের তদবির ও চাপে অনুদানের অর্থ বিতরণে হিমশিম খেতে হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু এবার পবিত্র হজ পালনের প্রস্তুতি নিতে আগেভাগেই মন্ত্রণালয় এ কার্যক্রম হাতে নেয়। ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমপিরা এ অনুদান গ্রহণ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যেতে পারে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান মানবজমিনকে বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তা বিতরণ না হওয়া হতাশাজনক। বরাদ্দের পরিমাণ আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। তবুও কম বরাদ্দের অজুহাতে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন না। যারা তৃণমূল থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তারা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ গ্রহণ করেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশের প্রত্যেক মাননীয় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার, মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য যথাক্রমে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং মন্দিরের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত প্রত্যেক এমপি’র নির্বাচনী এলাকার মসজিদ সংস্কার, মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও মন্দিরের ক্ষেত্রে বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছরও সমপরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি গত বছর দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, ইসলাম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ ও কবরস্থান সংস্কার, মেরামত ও পুনর্বাসন, হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মন্দির/শ্মশান) সংস্কার-মেরামত, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (প্যাগোডা) সংস্কার/মেরামত, খ্রিস্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (সেমিট্রি) সংস্কার-মেরামত এবং দুস্থ মুসলিম ও দুস্থ হিন্দু পুনর্বাসনের জন্য অনুদান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিগত তিন অর্থবছরে সারা দেশের প্রায় ২৩ হাজার ৪০৮টি মসজিদ, মন্দির, মঠ, আশ্রম, প্যাগোডা ও বৌদ্ধ মন্দির, কবরস্থান, ইদগাহ, শ্মশান এবং সিমেট্রি ইত্যাদি সংস্কার ও মেরামতের লক্ষ্যে প্রায় ৫৬ কোটি ৫ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬ হাজার ৪২৫ জন দুস্থ ব্যক্তির আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ১২.১৫ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করেছে মন্ত্রণালয়।
previous post