বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী-গবেষক-অধ্যাপকদের তালিকায় বাঙালির জয়জয়কার। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে একটি সূচক প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি ড. এ কে এম আহসানুল হকের নাম স্থান পেয়েছে।
সূচকটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২১ সালে মার্কেটিং বিষয়ে ড. এ কে এম আহসানুল হক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া’য় ১ম, সমগ্র মালয়েশিয়ায় ২য়, এশিয়ায় ১৫তম ও বিশ্বে ১৯২তম গবেষক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশপিডিয়া প্রকাশিত ‘সাকসেসফুল পিপলস ইন মালয়েশিয়া’ শীর্ষক বইয়ে স্থান পেয়েছেন প্রফেসর ড. এ কে এম আহসানুল হক। তার জীবনী বইটিতে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির মোহাম্মদসহ দেশটির অন্যান্য সফল ব্যক্তিদের নামও স্থান পেয়েছে।
বইটির তালিকায় অন্যান্য সফল ব্যক্তিদের মধ্যে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, গভর্নর, ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে। ওই সংস্থা ২০১৯ ও ২০২০ সালেও মালয়েশিয়ার অন্যতম সফল ব্যক্তি হিসেবে তাকে ভূষিত করে।
শিক্ষা জীবনে প্রফেসর ড. এ কে এম আহসানুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে ১৯৯১ সালে অনার্স (স্নাতক), ১৯৯৩ সালে মাস্টার্স ইন বিজনেস স্টাডিজ (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রি প্রাপ্ত। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (ইউপিএম) এর অধীনে গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট (এএসিএসবি) থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর একই বছর দেশটির মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে মার্কেটিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। অধ্যাপক আহসানুল হক স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য (আনুমানিক ৩৫০) গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং কনফারেন্স পেপার উপস্থাপন করেছেন।২০০২ সাল থেকে তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে অনেক গবেষণা অনুদানের সঙ্গে জড়িত।
আহসানুল পাঠ্যপুস্তক, গবেষণা বই, বইয়ের অধ্যায় এবং অধ্যায়ের মডিউলও প্রকাশ করেছেন। তিনি ওয়েব অব সাইন্স, স্কোপাস, এমারল্ড, এবিডিসি, এবিএস ইআরএ, ইনদারসাইন্স নিবন্ধিত জার্নালে এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আন্তর্জাতিক রেফারেড জার্নালে অসংখ্য গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সূচক জার্নালের সম্পাদকীয় প্রধান ও এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য। এ বাংলাদেশি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসামান্য গবেষণা কাজের জন্য এমারল্ড লিটারেটি অ্যাওয়ার্ড এবং ব্রিটিশ পাবলিশিং হাউসসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর গবেষণার তত্ত্বাবধান করেছেন। প্রফেসর হকের তত্ত্বাবধানে মোট ৩৯ জন ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন, যাদের অনেকেই বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।
তিনি বিশ্বব্যাংক, টেলিকম, জেড-কনসাল্টিংসহ বেশ কয়েকটি পরামর্শমূলক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিজিটিং প্রফেসর এবং মূল্যায়নকারী (কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট) নিযুক্ত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সিম্পোজিয়ামে তিনি প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
আমেরিকান মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন (এএমএ), চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব মার্কেটিং (যুক্তরাজ্য), ইনস্টিটিউট অব মার্কেটিং মালয়েশিয়া, একাডেমি অব ওয়ার্ল্ড বিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট, ওয়ার্ল্ড বিজনেস ইনস্টিটিউট (ডব্লিউবিআই), ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স সোসাইটি (আইএবিই) এবং আরও অনেক সোসাইটিসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আজীবন সদস্য ও বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত।
আহসানুল যুক্তরাজ্য এবং মালয়েশিয়ার চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব মার্কেটিং (সিআইএম) থেকে প্রফেশনাল চার্টার্ড মার্কেটার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনজুমার বিহেভিয়র, ইন্টারনেট মার্কেটিং, ইসলামিক মার্কেটিং এবং মার্কেটিং ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন শাখায় সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে প্রফেসর ড. আহসানুল হক বলেন, পঞ্চাশ পেরিয়ে বাংলাদেশ। এ দীর্ঘ যাত্রায় আর্থ-সামাজিক পরিসরে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। তার মধ্যে গবেষণা খাত অন্যতম। অর্থনীতির সম্ভাবনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার ও উন্নয়ন সুফলের ন্যায্য বণ্টনে গবেষণালব্ধ ফলাফলভিত্তিক নীতি-পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশি এ গবেষক।
তিনি বলেন, দেশের গবেষণা খাতের দুর্বলতায় নীতিনির্ধারণের কাজটি বিজ্ঞতা-দূরদর্শিতার সঙ্গে সম্পাদন করা যাচ্ছে না। থেকে যাচ্ছে নানা ফাঁক-ফোকর। এর অভিক্ষেপ নানাভাবে আজ দৃশ্যমান। একদিকে নীতি-পরিকল্পনাগুলো যেমন অনেকক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ন্যায্যতা, কার্যকারিতা হারাচ্ছে; আবার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীও নীতি দর্শনে থাকছে উপেক্ষিত।
একই কারণে চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়েও উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। বর্তমান ধারায় উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয়র মুঠোবন্দি, বহুমাত্রিক বঞ্চনার শিকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এটি বঙ্গবন্ধুর লালিত ও সংবিধানপ্রতিশ্রুত সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের বিপরীত প্রবণতা বৈকি। উন্নয়নের যথাযথ প্রভাব নিরূপণ, উন্নয়ন প্রক্রিয়া গণমুখী করার বিষয়টি নির্ভর করছে গবেষণাকেন্দ্রিক নীতিকাঠামো চর্চার ওপর। গবেষণা খাতের উন্নয়ন ছাড়া যা সম্ভব নয়।