এই মাত্র এই মাত্র পাওয়া জাতীয় জীবনধারা প্রবাস কথা প্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশ

মোর পোলাডার লাশটা আইন্যা দ্যান

কাঁদছে বরগুনা। অপেক্ষায় লাশের। ইউক্রেনের অলভিয়া পোর্টে রকেট হামলায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যু শোকে কাতর গোটা এলাকা। হাদিসুরের পরিবারে চলছে আহাজারি। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে বাবা বাকরুদ্ধ ও মা কিছুক্ষণ পর পর হচ্ছেন সংজ্ঞাহীন। শোকে মুহ্যমান স্বজনরা। গ্রামে গেলে দূর থেকে ভেসে আসছিল হাদিসুরের মা আমেনা বেগমের আহাজারি। ‘…বাজানে মোরে কইছে, এইবার বাড়িতে আইয়া ঘর উডাইবে।
আর ভাঙা ঘরে থাহন লাগবে না মা। ঘরহান উডান অইলে বিয়া কইরা বউ ঘরে আনবে। মোর পোলাডার লাশটা আইন্যা দ্যান, মোর পোলাডারে মুই একনজর দেকমু, আর কিচ্ছু চাই না।’

নিহত হাদিসুরের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার ৩ নং হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার এবং আমেনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে। চার ভাইবোনের মধ্যে হাদিসুর ছিল দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী হাদিসুর। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া হাদিসুর চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে ৪৭ ব্যাচে লেখাপড়া শেষ করে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন।

পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এবার বাড়ি ফিরলে তাকে বিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। তারা এখন দুশ্চিন্তায় হাদিসুরের মরদেহ দেশে কীভাবে আনবেন। যুদ্ধের কারণে যেখান থেকে জাহাজই বের হতে পারছে না, সেখানে হাদিসুরের মরদেহ নিয়ে আসাটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও উদ্বেগ তাদের বাড়ছে।

নিহত হাদিসুরের চাচা ও বেতাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান জানান, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে খবরটি পেয়েছেন তারা। পরে হাদিসুরের পরিবারকে তা জানানো হয়। হাদিসুরের মৃত্যুর খবর আসার পর পুরো এলাকায় শোক নেমে এসেছে, আমরা আগে থেকেই বিচলিত ছিলাম। কারণ, হাদিসুর পাঁচদিন আগে তার মাকে মোবাইলফোনে জানিয়েছিল, যুদ্ধে আটকা পড়েছে। ফিরে আসতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই সত্য হলো। হাদিসুর আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

স্বজনরা জানান, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে ৮ বছর ধরে চাকরি করেন হাদিসুর। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় ২৯ জন ক্রুসহ আটকা পড়ে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধি। ওই দিনই বাড়িতে আটকে পড়ার খবর জানান হাদিসুর। ওই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকায় তার স্বজনরা একাধিকবার কল দিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। বুধবার রাতে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নেটওয়ার্কের সিগন্যাল পেতে জাহাজের কেবিন থেকে বেরিয়ে ব্রিজে আসেন হাদিসুর। এর কিছুক্ষণ পরেই জাহাজটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান হাদিসুর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর সপ্তম দিনে বাংলাদেশি জাহাজটিতে গোলার আঘাতের ঘটনা ঘটলো।

হাদিসুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িভর্তি মানুষ। বাকরুদ্ধ বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসাশিক্ষক আবদুর রাজ্জাক তেমন কোনো কথা বলছেন না।
নিহত হাদিসুরের মেজ ভাই মো. তারেক বলেন, হাদিসুর পরিবারের সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন যেন নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারেন।

তারেক সরকারের কাছে দাবি জানান, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এক নজরের জন্য হলেও আমার ভাইয়ের লাশটা শুধু দেখতে চাই। ভাইকে হারিয়ে আমাদের পরিবারটি পথে বসে গেল।

বুধবার জাহাজ থেকে ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্সকে ফোন করেছিলেন হাদিসুর। প্রিন্সের সঙ্গে কথা বলার সময় হাদিসুরের প্রান্তে বিকট শব্দ হয়। পরে তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রিন্স আরও বলেন, গোলার আঘাতের সময় বড় ভাই বাইরে এসে মোবাইলফোনে আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎ গোলা এসে পড়ে জাহাজটিতে। বিকট শব্দের কারণে কিছুই শুনতে পাইনি। আমার ভাইয়ের এবার বাড়ি ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।

বরগুনা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, নিহত হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউক্রেনে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। তাই আপাতত মরদেহ আনার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।

Related posts

ড. মুশফিকুর রহমানকে ইফা’র নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকার

Mims 24 : Powered by information

দুর্ঘটনার পর বাসে আগুন, দগ্ধ হয়ে নিহত ৭

razzak

নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে টাইগাররা

razzak

Leave a Comment

Translate »