এই মাত্র জাতীয় ব্রেকিং

গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার ৬৪ শতাংশ নারী

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে গণপরিবহনে নারীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি সংস্থা আঁচলের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তরুণীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব শীর্ষক সমীক্ষাটি করা হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সারা দেশের এক হাজার ১৪ জন তরুণী সমীক্ষায় অংশ নেন।

আঁচলের তথ্য বলছে, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ নারী। এই সংখ্যাটি অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর হয়রানির মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৩.৮৯ শতাংশ নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন।

শিক্ষা, চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে নারীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে থাকেন। সমীক্ষা বলছে, গণপরিবহন হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় বাস। তবে হয়রানির স্থান হিসেবে বাস ও বাসস্টেশন—দুটিকে উল্লেখ করেছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীরা। দুই জায়গা মিলে হয়রানির হারটা অবশ্য অনেক বড়—৮৪.১০ শতাংশ।

তবে রেল বা রেলস্টেশনে যৌন হয়রানি কম হয় বলে জানিয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীরা। রেল ও রেলস্টেশনে এই হার ৪.৫৮ শতাংশ। আর রাইড শেয়ারিং সেবায় ১.৫৩ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, অবশ্যই নারীদের জন্য নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা দরকার। পাশাপাশি তাঁদের নিরাপত্তাও চাই। এর দায়িত্ব সরকারের।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ। ২০.০৪ শতাংশ কুদৃষ্টি এবং অনুসরণের শিকার হয়েছেন বলে জানান।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নারীরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন একাকী চলার সময়; সংখ্যায় তা ৭৫.৬০ শতাংশ। তবে মা, বোন, বান্ধবী বা অন্য নারী সঙ্গী থাকা অবস্থাও হয়রানির মাত্রা কম নয়—২১.৫৭ শতাংশ। শুধু বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষ সঙ্গী সঙ্গে থাকলে ২.৮৩ শতাংশ হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে সমীক্ষায় উঠে আসে।

সমীক্ষা বলছে, অনলাইনে যে ৪৩.৮৯ শতাংশ নারী বিড়ম্বনার শিকার হন তার মধ্যে অবান্তর ও কুরুচিপূর্ণ বার্তা এবং বিব্রতকর মন্তব্যের শিকার হন ৬১.১২ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন ১০.৩৪ শতাংশ। ৯.৮৯ শতাংশ ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি নিয়ে দুর্ভোগ পোহান বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া অযাচিত আইডি স্টকিংয়ের (অকেজো) শিকার হন ৫.১৭ শতাংশ।

ঘরেও মানসিক সমস্যায় পড়েন নারীরা। ২২.২৯ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁদের মতামতকে পরিবারে মূল্যায়ন করা হয় না। শুধু নারী হওয়ার কারণে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয় ৪৬.২৫ শতাংশকে। সমীক্ষা বলছে, নারীদের প্রতি প্রথম বাধা আসে পরিবার থেকেই। এ জন্য পরিবারকেই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে হবে নারীদের ন্যায্য অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে।

নারীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট তাঁদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং পরিবার প্রতিষ্ঠিত নারীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনো প্রস্তুত নয়। অথচ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাঁদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। ’

পারিবারিক টানাপড়েন তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সর্বাধিক প্রভাব ফেলে। সমীক্ষা বলছে, ৩১.৮৫ শতাংশ নারী এমন তথ্যই দিয়েছেন। আর্থিক অসচ্ছলতা ২৪.৪৬ শতাংশ নারীর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বেকারত্বের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করেন ১৪.৭৯ শতাংশ নারী। পারিবারিক কলহ ২৭.৩২ শতাংশের মনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। সেই সঙ্গে পরিবার থেকে অযাচিত চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ততার শিকার হয়েছেন ২৩.৯২ শতাংশ নারী।

Related posts

ছাত্রলীগের আয়োজনে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

Mims 24 : Powered by information

শুভ খ্রিস্টীয় বর্ষ ২০২৩: আতশবাজির ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ

Mims 24 : Powered by information

জাল অক্ষত রেখে সেমিতে সিটি

razzak

Leave a Comment

Translate »