বিশ্বজুড়ে বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধ করতে চলেছে জনপ্রিয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন। লাগাতার বিতর্ক ও আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে ২০২৩ সাল থেকেই ট্যালকমভিত্তিক বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে সংস্থাটি।
শিশুদের যত্ন নিতে অতি পরিচিত নাম জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালক বা ট্যালকমভিত্তিক বেবি পাউডার। কিন্তু সেই পাউডারের ব্যবহারেই ত্বকে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। একই কারণে দু’বছর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বিক্রি বন্ধ হয়েছিল জনপ্রিয় এই বেবি পাউডার। আর এবার বিশ্বজুড়ে তা কার্যকর হতে চলেছে।
২০২০ সালে জনসনের বেবি পাউডার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রায় ৩৮ হাজার মামলা দায়ের করা হয়। জনসনের ট্যালক পণ্যে অ্যাসবেস্টসের মাধ্যমে দূষণের কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন ভোক্তারা। এ সংক্রান্ত মামলার এক রায়ে মার্কিন আদালত বলেছিলেন, জনস্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
তবে জনসন এন্ড জনসন দাবি করেছে, কয়েক দশক ধরে অনেক স্বাধীন গবেষণায় তাদের এই ট্যালক বেবি পাউডার নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ অগাস্ট) প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিবৃতিতে ফের এটিই পুনর্ব্যক্ত করে।
জনসন এন্ড জনসন ২০২০ সালে জানিয়েছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় তাদের তৈরি বেবি পাউডার বিক্রি বন্ধ করে দেবে, কারণ বেশ কিছু মামলার পর এটি নিরাপদ কীনা, তা নিয়ে “বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার” কারণে সেখানে এর চাহিদা কমে গেছে।
তখন কোম্পানিটি একথাও জানিয়েছিল যে, যুক্তরাজ্যসহ বাকী বিশ্বে তারা এটির বিক্রি অব্যাহত রাখবে। তবে ১১ আগস্ট ২০২২ তারিখে কোম্পানির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যালক পাউডার ২০২৩ সাল থেকে বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। তারা আরো জানায়, সব ট্যালক বা ট্যালকমভিত্তিক পাউডারের উৎপাদনকে কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডারে রূপান্তরিত করা হবে।
জনসন এন্ড জনসনের বিরুদ্ধে বহু ভোক্তা মামলা করেছেন এই বলে যে, কোম্পানিটির ট্যাল্ক পাউডারে অ্যাসবেস্টস আছে এবং এটি ব্যবহার করে তারা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। ট্যাল্ক পাওয়া যায় মাটির নীচে খনিতে এমন একটি স্তরে, যা অ্যাসবেস্টসের খুব কাছাকাছি। অ্যাসবেস্টস থেকে মানুষের শরীরে ক্যান্সার হতে পারে।
জনসনের বেবি পাউডারে ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতির বিষয়টি ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রথম জনসমক্ষে আনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ১৯৭১ সাল হতে ২০০০ সালের শুরু পর্যন্ত জনসন এন্ড জনসনের ট্যাল্ক এবং বাজারজাত করা পাউডারে কখনো কখনো সামান্য পরিমাণে অ্যাসবেস্টসের অবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানায় রয়টার্স।
সেই ১৯৮৪ সাল থেকে শিশুদের যত্নে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। তাদের এসব পণ্য এতটাই জনপ্রিয় হয়ে যায় যে বাজারে প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করে সংস্থাটি। যদিও গ্রাহকদের রোষের মুখে পড়ে বহুবার আইনি রক্ষাকবচ চায় সংস্থা। ট্যাল্ক ভিত্তিক বেবি পাউডারে ক্যান্সারের জীবাণু নেই, তা প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। অবশেষে ব্যর্থ হওয়ায়, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ থেকেই ট্যালকমভিত্তিক বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধ করতে চলেছে সংস্থাটি।