২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তার ৫ বছর পূর্ণ হলো আজ, ২৫শে অগাস্ট। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের ঢল নামে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। সেই সময় আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
১৯৭৭ – ৭৮ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করলেও সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করে ২০১৭ সালে। আগে থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাসহ মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১২ লাখেরও বেশি, এতে করে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে। গত পাঁচ বছরে ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে আরও ১ লাখ রোহিঙ্গা শিশু।
২০১৭ সালের পর থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানের পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও তাদের ফেরত পাঠাতে কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা মুখে বললেও ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল যেভাবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে; সেভাবে মিয়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি, কমিটি গঠন এবং কয়েক দফা বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট গত ১৬ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, মিয়ানমারে তাদের গ্রামে ও বাড়িতে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূল হলেই কেবল তা সম্ভব হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয়।
এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার। তিনি মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গারা মিশেল ব্যাচেলেট ও নোয়েলিন হেইজারের কাছে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছেন। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে কিংবা কখন হবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ।