মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত চীনে আবারও ভয়াবহ আকারে ভাইরাসটির সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। কঠোর বিধি-নিষেধ শিথিল করতে না করতেই চীনে করোনা পরিস্থিতির এমন ভয়াবহ অবনতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, ‘চীনে করোনার এমন সংক্রমণ আগে কখনো দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ২০২০ সাল থেকে ‘শূন্য করোনা নীতির’ আওতায় চীনে করোনার কঠোর বিধিনিষেধ চলছিল। যার ফলও পেয়েছিল দেশটি।
যখন চীন থেকে ভাইরাসটি ইউরোপ অ্যামেরিকাসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছিল তখন সেখানে ক্রমেই কমে গিয়েছিল ভাইরাসটির আক্রমণ। কিন্তু চীন তাদের শূন্য করোনা নীতির কারণে বিধিনিষেধ চালিয়ে যাচ্ছিল। সম্প্রতি ওই বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন দেশটির অনেক শহরের বাসিন্দা।
প্রেক্ষিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে বেশির ভাগ বিধিনিষেধ তুলে নেয় চীন সরকার। আর তাতেই দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। বিধিনিষেধ উঠে গেলে আবারও দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। যা এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে গড়াচ্ছে।
চীনে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ২৪১ জনের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে দেশটির সরকার। দেশটির জনসংখ্যা বিবেচনায় মৃত্যুর এই পরিমাণ বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেক কম। এমনকি কবরস্থানে মরদেহের সারি দেখা গেলেও গত মঙ্গল ও বুধবার নতুন করে করোনায় কেউ মারা যাননি বলে জানিয়েছে চীন সরকার।
তবে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির চলতি সপ্তাহে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনে প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, চীনের বেইজিং ও অন্যান্য শহরের হাসপাতালগুলোতেও ক্রমেই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এছাড়া কঠোর কোভিড নীতি শিথিল করার পর কমে গেছে সারাদেশে ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা। ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের সঠিক সংখ্যা ও বিস্তারিত তথ্য দিতে চীন সরকারকে আহবান জানান তিনি।
ডব্লিউএইচও প্রধান আরও বলেন, চীনের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন ডব্লিউএইচও। ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের করোনার টিকা দেওয়ায় চীনকে সহায়তা করছে সংস্থাটি। এ ছাড়া দেশটির জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়ে যাবে ডব্লিউএইচও।
এদিকে, চীনে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ওমিক্রন ধরণের সংক্রমণ মিলেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। এরই মধ্যে দেশটির গুজরাট ও উড়িষ্যায় চারজনের দেহে শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রনের উপধরণ ‘বিএফ-সেভেন’। ফলে ভারতজুড়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।