ফ্ল্যাপ
অনিমেষ,
আমি এখনও তোমায় খুঁজি জানো?
ভীষণ তেতে ওঠা দুপুরে তোমার তৃষ্ণা পায়;
কাঁচের বোতলের গায়ে জমা জলের মতন
হৃদয় তোমার স্পর্শে শীতল হতে চায়
অন্তর্জালে নীল সাদা জগতে
যে হাসিমুখে ছবি দেয় ;
তার মুখ আমার কাছে অচেনা
গৃহী পুরুষের মাপা হাসি তার ঠোঁটে
আমি আবার পথে নামি জানো?
পিচঢালা তাতানো পথ আমায় আবার কাছে টানে,
আঁচলে মুছি ঠোঁট
আজন্ম তৃষ্ণা বুকে নিয়ে;
আমি মানুষের ভীড়ে তোমায় খুঁজি
তোমার সেই বোহেমিয়ান হাসিমুখ
তনুর অনিমেষ কে রীমা তা জানে না। তবে নীল সাদা জগতের চির চেনা মানুষের হাসিমুখের ছবি ওর কাছেও আজ কেমন অচেনা।
——————————————-
শাহেদের অসংখ্য সরি লেখা খুদে বার্তা আর চেম্বারে পাঠানো ফুলের উত্তরে রীমা একটি খুদে বার্তা পাঠাল শাহেদকে ,”ইঁদুর দৌড়ে অন্য কাউকে হারাতে গিয়ে তুমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছ; আশা করি আবার নিজেকে খুঁজে পাবে।”
—————————————————-
” না। আপনি ঠিক বুঝছেন না। এমনিতেও আপনার বয়স তিরিশের কাছাকাছি। নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে হয়তো অত অভিজ্ঞতা এই মুহূর্তে নেই। আমার ধারণা ভুল না হলে আপনি বিবাহিতা।”
” আমাকে নিয়ে কথা বলতে আমরা এখানে বসিনি রাজীব। সমস্যা আপনার। তিরিশের কাছাকাছি বয়স বলে আমাকে রাগিয়ে দেবার চেষ্টা ও ছেলেমানুষি মনে হচ্ছে। আপনি দু চোখে দুই রঙের লেন্স পড়েছেন কেন? পরিচয় গোপন করার জন্য? ”
———————————————————————–
আপনি কখনো শ্মশান ঘাটে গেছেন? আমি ছোটবেলায় একবার গেছি। শ্মশান যাত্রীদের আহাজারী শুনে নিজেকে খুবই খারাপ মানুষ মনে হয়েছিল।যখন দাহ করা হল তখন সেই গন্ধ আমি মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। রাতের বেলা বেশ ভয় ভয় করতে লাগল। এতকাল পরেও সেই গন্ধ আমার মনে আছে। আমি নিশ্চিত গত কয়েকদিন ধরেই আমি সেই গন্ধ পাচ্ছি।
আরেক দিন কি হয়েছে আপনাকে বলি। গভীর রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। মনে হল অস্পষ্ট গলায় কেউ কথা বলছে। আমি ঘুম থেকে উঠে চরম আশ্চর্য হলাম। আমার পুরো ঘর বেলি ফুলের তীব্র গন্ধে আচ্ছন্ন।
————————————————
বেশ হাওয়া দিচ্ছে। সারা তার চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিল। সেই হাওয়ায় পায়ের কাছে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি এসে পরল। আপন মনেই একটা ফুল কুড়িয়ে নিল ও। মনে হচ্ছে ওর মা আশেপাশেই আছে। নিজের মনেই বলল, ” কৃষ্ণচূড়ার দিন”।
লেখক পরিচিতি:
ফারহানা সিনথিয়া
শৈশব কেটেছে ঢাকায় বাংলাদেশে। এরপর কানাডা। বাবা চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ছিলেন আর মা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষিকা। বই পড়া শুরু অধ্যাপক নানার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়।
সেখানেই ম্যাক্সিম গোর্কির বাংলায় অনূদিত লেখা পড়ে বিদেশি সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়। এপার বাংলার পছন্দের লেখক হুমায়ুন আহমেদ এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। কৈশোরের শীর্ষেন্দু,সমরেশ আর সুনীলের বইয়ের সঙ্গে সখ্যতা এখনো আছে।
ইংরেজিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা স্বত্তেও বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। কানাডা থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে চাকরি করছেন ।
২০২০ বইমেলাতে পেন্সিল প্রকাশনীর গল্প সংকলনে ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ বইমেলাতে এসেছে থ্রিলার “আবর্ত”। জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোতে নিয়মিত কলাম আর ছোট গল্প লেখেন। ২০২১ সালে পাচটি সংকলনে এসেছে রহস্য আর সমকালীন ছোটগল্প। লেখালেখি করে সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশের সঙ্গে আবার মনের সংযোগ স্থাপন। বইমেলা ২০২২ এ প্রকাশিত উপন্যাস দ্বিতীয় জীবন পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। বইমেলা ২০২৩ এর উপন্যাসের নাম ” কৃষ্ণচূড়ার দিন”।