আলঝেইমার হলো ডিমেনশিয়ার একটি রূপ। এটি একধরনের মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। আলঝেইমার রোগের ফলে মস্তিষ্কে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। প্রবীণরাই সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের স্মৃতিবিভ্রাট হয়। বেদনাদায়ক এ রোগ শনাক্তের পরিচিত পরীক্ষাগুলো ব্যয়বহুল, জটিল ও কষ্টদায়ক। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিজ্ঞানী রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে আলঝেইমার শনাক্তের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা বলছেন, আলঝেইমার শনাক্তে রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি অনুমোদন পেলে দ্রুত রোগটি শনাক্ত করা যাবে। এতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। এসব তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
আলঝেইমার রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা কঠিন। বর্তমানে ব্যয়বহুল ব্রেন স্ক্যান বা এমআরআই এবং পিইটি স্ক্যানারের মাধ্যমে আলঝেইমার পরীক্ষা করা হয়। সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) বিশ্লেষণ করেও এটি শনাক্ত করা যায়। কিন্তু সিএসএফ পরীক্ষাটি অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও কষ্টদায়ক।
এমতাবস্থায় এক ফোঁটা রক্ত থেকে আলঝেইমার শনাক্তের বিষয়টিকে মাইলফলক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের পিটসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টমাস কারিকারি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘এক ফোঁটা রক্ত থেকেই আলঝেইমার শনাক্ত করা যাবে। এটা বিশাল অগ্রগতি। কারণ আলঝেইমার শনাক্তের বর্তমান পরীক্ষাগুলো জটিল ও ব্যয়বহুল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশেও সবাই এসব পরীক্ষার সুযোগ নিতে পারেন না। এ অবস্থায় একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিমেষে আলঝেইমার শনাক্তের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
টমাস কারিকারি আরো বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবনটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা প্রায় শেষের দিকে। আমরা এমন অ্যান্টিবডি ভিত্তিক রক্ত পরীক্ষার চেষ্টা করছি, যার মাধ্যমে ব্রেন স্ক্যান বা সিএসএফের মাধ্যমে যে ফল পাওয়া যেত, তাই পাওয়া যাবে। কিন্তু জটিলতা ও ব্যয় কমে আসবে শূন্যের কোঠায়।’
নিজেদের উদ্ভাবন অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আলঝেইমার শনাক্তের বিষয়টি যাচাই করে দেখতে টমাস কারিকারি ও তার সহকর্মীরা প্রায় ৬০০ রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। এসব রোগী বিভিন্ন মাত্রায় আলঝেইমারে আক্রান্ত। তাদের গবেষণা ফল মেডিকেল বিষয়ক সাময়িকী দ্য জার্নাল ব্রেনে প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে আরও বেশি রোগীর ওপর পরীক্ষা করার অনুমোদন নেওয়া। এতে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও বর্ণের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। টমাস কারিকারি বলেন, তিনি আশা করছেন, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আলঝেইমারের চিকিত্সার জন্য বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যেতে পারবেন।