জনদুর্ভোগ জাতীয় জীবনধারা ব্রেকিং ব্রেকিং নিউজ

বঙ্গবাজারে আগুন: সাড়ে ৬ ঘণ্টার অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই পুরো মার্কেট

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজারে আগুন লাগে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টার পরে। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর বাতাস থাকায় তা দ্রুতই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। টিন আর কাঠে নির্মিত বঙ্গবাজারে দোকানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৭০টি। এগুলোর সবই সাড়ে ৬ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই। আশেপাশের কয়েকটি মার্কেট মিলিয়ে এখানে ৫ হাজারের মতো দোকান রয়েছে; যার অধিকাংশই পুড়েছে।

প্রথমে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। পরে পাশের গুলিস্তান সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, মহানগর হকার্স মার্কেট, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, এনেক্স টাওয়ার, বরিশাল প্লাজা, হোমিও মার্কেটও ইসলামীয়া মার্কেটসহ মোট ৯টি মার্কেটে আগুন লাগে। দোকান মালিক-কর্মচারী, ক্রেতা-বিক্রেতা, স্থানীয়রা বলছে তারা একসঙ্গে এতো মার্কেট পুড়তে দেখেনি।

ভয়াবহ এই আগুন বঙ্গবাজারের পূর্ব পাশের পুলিশ সদর দপ্তরের সীমানাও ছাড়ায়। সেখানে পাঁচ তলা একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় আগুনে, সেই ভবনে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ আগুনে পুড়েছে। ওই ভবনের পাশের পুলিশ ব্যারাকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার এক পর্যায়ে জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯ এর সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তা সচল হয় নয় ঘণ্টা পর।

ফায়ার সার্ভিস মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায়। সকাল ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে একে একে ৪৮টি ইউনিট যোগ দেয়। বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীও যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে, ছিল পুলিশ, র‍্যাব, আনসারও। পানি আনতে নামে হেলিকপ্টার। আগুন নিভানোর কাজে যুক্ত ছিল সেচ্ছাসেবক, দোকান মালিক-কর্মচারী ও স্থানীরা।

সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিলেও তারপরও বিভিন্ন স্থানে শিখা দেখা যাচ্ছিল। এমনকি রাতেও দুটি স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে, তা নেভাতে কাজ করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

আগুন নিভতে দেরি দেখে এক পর্যায়ে জনতা ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরেও হামলা চালায়। বঙ্গবাজারের দক্ষিণ পাশের সড়কের ঠিক উল্টো পাশেই এই বাহিনীর সদর দপ্তর।

এই হামলার কারণে আগুন নেভানোর কাজ বিঘ্নিত হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সেই সঙ্গে দূর থেকে পানি আনা, মার্কেটের বিভিন্ন পাশ তালাবদ্ধ থাকা, চলাচলের পথ উন্মুক্ত না থাকাকে আগুন নেভাতে দেরির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে বিপুল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হলেও কারও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে ও হামলায় আটজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

কীভাবে এই আগুন লাগল, সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আট সদস্যের কমিটি করেছে ডিএসসিসি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

এই অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহমর্মিতা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আগুনের বিষয়ে ভবিষ্যতে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

এর আগে ১৯৯৬ সালে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল পুরো বঙ্গবাজার মার্কেট। আরো কয়েক বার আগুনে পুড়ে মার্কেটটি। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস মার্কেটটিকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ১০ বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মার্কেটটিতে ব্যানার টাঙানো হয়েছিল। পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কমপ্লেক্স ভেঙে এখানে ১০ তলা অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এই মার্কেট রক্ষা করতে হাইকোর্টে রিট করেন। এতে মার্কেট নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটেই চলে বেচাকেনা।

Related posts

দৈনিক মৃত্যুতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, সংক্রমণে জার্মানি

razzak

তিক্ততা ভুলে সৌদি যুবরাজকে উষ্ণ আলিঙ্গন এরদোগানের

razzak

টি-টোয়েন্টি সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন

Irani Biswash

Leave a Comment

Translate »