আন্তর্জাতিক এই মাত্র ব্রেকিং

আইন নয়, জনগণের উদ্যোগেই ‘হর্নমুক্ত’ শহর আইজল

একবার কল্পনা করুন তো: রোববার সকালে অফিসে যেতে বাইরে বেরিয়েছেন। বের হয়ে দেখেন রাস্তায় প্রচুর যানজট, অথচ হর্নের টুঁ শব্দ নেই। সব গাড়ি এগোচ্ছে কচ্ছপগতিতে, কিন্তু যাত্রীদের তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ধৈর্য ধরে বসে রয়েছেন, কখন জট কাটবে। বাংলাদেশের, বিশেষ করে ঢাকার রস্তায় এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিনই বটে! অথচ বাংলাদেশের খুব কাছেই এমন একটি শহর রয়েছে, যেখানে এগুলো নিত্যদিনের বাস্তবতা।

শহরটির নাম আইজল, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্য মিজোরামের রাজধানী। সড়কপথে ঢাকা থেকে আইজলের দূরত্ব মাত্র ৪২৮ কিলোমিটার। অথচ দুই শহরের শব্দদূষণ পরিস্থিতিতে যেন আকাশপাতাল পার্থক্য।

গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ঢাকাকে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ ও পাকিস্তানের ইসলামাবাদ। এ তালিকায় বাংলাদেশের আরেক শহর রাজশাহী হয়েছে চতুর্থ। আর পঞ্চম ভিয়েতনামের হো চি মিন শহর। অর্থাৎ শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ শহরের চারটির অবস্থানই দক্ষিণ এশিয়ায়। পঞ্চমটিও এশিয়ার।

অথচ কোনো ধরনের সরকারি বাধ্যবাধকতা ছাড়া এই অঞ্চলেই তৈরি হয়েছে শব্দদূষণ মুক্ত একটি শহর- আইজল। বলা হয়, ভারতের প্রথম হর্নমুক্ত শহর এটি। সেখানকার স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রায় পুরোটাই গড়ে উঠেছে শুধু জনগণের উদ্যোগে।

আইজলের জনসংখ্যা ৩৫ লাখের কিছু বেশি। নিবন্ধিত গাড়ি রয়েছে দুই লাখের মতো। রাস্তায় যানজটও হয় নিয়মিত। কখনো কখনো হয়তো শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে এক-দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তবুও হর্নের কান ঝালাপালা করা শব্দ নেই।

আইনে নিষিদ্ধ নয়, নিজেদের ইচ্ছাতেই হর্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকেন আইজলের বাসিন্দারা। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের একপাশ ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন গাড়ি নিয়ে। কারও ওভারটেক করার তাড়া নেই, কেউ লেনও বদল করেন না।

কদাচিৎ যদি কেউ হর্ন দিয়ে ফেলেন, তার দিকে বাকিরা এমন ভাবে তাকান, যেন ভাবখানা এমন- আরে ভাই, এত তাড়া কীসের? আমরা সকলেই তো যাচ্ছি!

রবার্ট পাচাউ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে বলেন, এখানকার লোকেরা খুবই ভদ্র ও সুশৃঙ্খল। রাস্তায় যানজট হলে আমরা বুঝতে পারি, সামনে কোনো সমস্যা হয়েছে। তাই হর্ন বাজালেও কাজ হবে না।

মিজোরামে ট্রাফিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা একটি সামাজিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকারও এখন নতুন নতুন নিয়ম ও আইন আনছে।

সরকারিসহ শহরের সব গাড়িরই মাসে তিন দিন রাস্তায় বের হওয়া নিষিদ্ধ। এটি নির্ধারণ করা হয় জোড়-বেজোড় লাইসেন্স নাম্বার অনুসারে। যেমন- কোনো গাড়ির নাম্বার যদি এক দিয়ে শেষ হয়, তাহলে মাসের ১, ১১ ও ২১ তারিখ সেটির রাস্তায় বেরোনো বন্ধ। আবার, গ্যারেজ থাকার প্রমাণ না দেখানো পর্যন্ত কেউ নতুন গাড়ির নিবন্ধন পান না।

সেখানকার ট্রাফিক বিভাগও অভিনব সব উপায়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ট্যাক্সি হলো শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। সেখানে সব ট্যাক্সিকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিদিন একটি গ্রুপের রাস্তায় বেরোনো বন্ধ।

এছাড়া প্রতি বছর সাধারণত ডিসেম্বর মাসে ‘নো টলারেন্স উইক’ পালন করে মিজোরাম সরকার। ওই সপ্তাহজুড়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকা যানবাহনকে জরিমানা করা হয়।

Related posts

পাকিস্তানে নির্বাচনের সময় ঘোষণা, মিছিল-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা

razzak

বরিস বললেন : ইউক্রেনে চলমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর

razzak

পূর্ব ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ পুতিনের

razzak

Leave a Comment

Translate »